Friday, September 4, 2015

ভালোবাসার পরিমাণ

ছেলেটি প্রায় প্রতিদিনই মেয়েটির কাছে জানতে চায়ত, “তুমি আমাকে ঠিক কতটুকু ভালোবাসো?”
মেয়েটি সবসময় ছেলেটির এই প্রশ্নকে এড়িয়ে যেত, সে বলত “সময় হোক তারপর জানতে পারবে”।
এভাবেই তাদের প্রেমময় দিন যায়। মেয়েটির সময় হয় না ছেলেটিকে সে কতটুকু ভালোবাসে তা জানাতে আর ছেলেটিও অপেক্ষায় থাকে মেয়েটি একদিন তাকে তার ভালোবাসার পরিমাণ জানাবে।
মেয়েটি ছেলেটির কথায় মনে মনে হাসে। ভাবে “ভালোবাসা কি কভু পরিমাপ করা যায়!
যদি ভালোবাসা পরিমাপযোগ্য হয় তাহলে সে কতটুকু ভালোবাসে ছেলেটিকে?” মেয়েটি হিসাব কষতে বসে। কিন্তু মেয়েটি এই হিসাব মেলাতে পারেনা।
এমনি ভাবে একদিন মেয়েটির আচরণে ছেলেটি কষ্ট পায়। ছেলেটির জন্মদিন ছিল সেদিন। প্রতিটি মানুষ তার জন্মদিনে তার প্রিয় মানুষটির কাছ থেকে কিছু না কিছু পেতে চায়। কিন্তু মেয়েটি ছেলেটিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতেও যেন কার্পণ্যবোদ করে। তাই ছেলেটির মনে শন্দেহ হয় সত্যিই কি মেয়েটি তাকে ভালোবাসে নাকি শুধুই টাইম পাস! সে মেয়েটির কাছে জানতে চায় “তুমি কি সত্যিই আমায় ভালোবাসো?” জবাবে মেয়েটি বলে “আমি বস্তুগত ভালোবাসায় বিশ্বাসী নই, তবুও যদি চাও তাহলে সেই উপহার ভবিষ্যতের জন্য রক্ষিত থাকল।”
ছেলেটি চায় তাদের এই ভালোবাসার কথায় আকাশের গায়ে লিখে দিতে যেন পৃথিবীর সবাই তা দেখতে পারে। কিন্তু মেয়েটি সবসময় অন্তরালে থাকতে চায়, সে চায়না তাদের এই ভালোবাসা পৃথিবীর অন্য কেউ জানুক। মেয়েটির এমন আচরণে ছেলেটি কষ্ট পায়। ছেলেটি আবারো মেয়েটির কাছে জানতে চায় “তুমি সত্যি করে বলতো আমাকে কতটুকু ভালোবাসো?” প্রবাদ আছে বাঙ্গালী মেয়েদের বুক ফাটে তবুও মুখ ফোটেনা। আর এই মেয়েটি যেন সেই প্রবাদ থেকেই উঠে এসেছে। মেয়েটি এবারো এই প্রশ্ন এড়িয়ে যায়, বলে “সময় হলে জানতে পারবে”।
ছেলেটি ধৈর্য্য ধরে থাকে মেয়েটি নিশ্চয় তাকে একদিন জানাবে আর মেয়েটিও ভাবতে থাকে কিভাবে ভালোবাসার পরিমাণ বের করা যায়।
তাদের ভালোবাসার বুকে একদিন ঝড় নেমে আসে। একটি সড়ক দূর্ঘটনায় ছেলেটি তার দৃষ্টিশক্তি হারায়। মেয়েটির পরিবার ছেলেটিকে ভুলে যাওয়ার জন্য মেয়েটিকে চাপ দেয়। তারা অন্ধ ছেলের সাথে তাদের মেয়েকে বিয়ে দিয়ে মেয়েটির জীবন ধ্বংস করতে চায় না।
মেয়েটির পক্ষে ছেলেটিকে ছেড়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না আর মেয়েটিকে হারালে ছেলেটির বেঁচে থাকাও অসম্ভব হয়ে উঠতো। মেয়েটি জানতে পারে ছেলেটি আই ট্রান্সপ্লানেট করলে সে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবে। মেয়েটি সিদ্ধান্ত নেয় ছেলেটিকে সে তার একটি চক্ষু উপহার দিবে। যে উপহার ছেলেটির জন্মদিনে দেওয়া হয়নি।
মেয়েটির এই সিদ্ধান্ত তার পরিবার মানতে নারাজ, নরম বস্তু আগুনে পুড়ালে যেমন তা শক্ত হয়ে উঠে তেমনি-ভাবে নরম মনের এই মেয়েটিও নিজের ভেতর বেদনার আগুনে পুড়ে যেন শক্ত হয়ে উঠেছে। তাই তার পরিবার তাকে থামাতে পারেনি।
মেয়েটির এই সিন্ধান্ত মানতে চায়না ছেলেটিও। তখন মেয়েটি বলে “তুমি আমার কাছে জানতে চাইতে আমি তোমাকে কতটুকু ভালোবাসি, ভালোবাসা আসলে কখনো পরিমাপযোগ্য নয়। তবুও যদি আমার ভালোবাসার পরিমাণ তোমার জানতে ইচ্ছা হয় তবে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখো। আমার দৃষ্টিতে সব লেখা থাকবে।”
মোঃ কবির তালুকদার। হাইমচর, চাঁদপুর।