Friday, September 4, 2015

ভাঙ্গা মন

“রাতে শেয়াল ডাকে, দিনে সাপে কাটে। এই জঙ্গলে আমি আর থাকবোনা। এখানে কোনদিন ছেলে মানুষ হবেনা, জংলী হয়ে যাবে”- বলতে বলতে ব্যাগ গুছায় নীলকান্ত বাবুর বউ। নীলকান্ত মীনমীন করে বলে,
- আরও স্টাফদের ছেলেমেয়েরা তো ভার্সিটি মেডিক্যালে পড়ে। মাস্টারের ছেলেটিও স্কলারশীপ নিয়ে আমেরিকা চলে গেলো।
- তুমি থাকো এই জঙ্গলে, আমি গেলাম।

বেরিয়ে যায় সে। এর মাঝে পেরিয়ে যায় দুবছর। নীলকান্ত বাবুর বউয়ের শেষ চিঠি আসে, ডির্ভোস চেয়ে।
অঝোর বৃষ্টিতে চা বাগানের সিনিয়র স্টাফ নীলকান্ত তার কোয়ার্টারের এলোমেলো ঘরে বসে চলে যাবার প্রস্তুতি নিতে চেষ্টা করে।
তারস্বরে চিৎকার করে রাধিকা নিজের উপস্থিতি জানান দেয়, “এ বাবু ঘর কা এত্তো নোংরা করেচিস্ কেনে? তু হাট্। হাম সব সাফা করে দিচ্চি”। “কিছু সাফা করতে হবেনা। তুই সব ব্যাগে ভরে দে”
এমন সময় পাশের কোয়ার্টারের নূর বাবু হাঁক ছাড়েন – “নীল বাবু জলদি এসো। এক দফা তাস হয়ে যাক। রান্না-টান্না করোনা। আমার ঘরে খিচুড়ী-হাঁসের মাংস হচ্ছে। চলে এসো”। উল্টোদিকে তাকিয়ে আরও জোরে হাঁক দেন তিনি, “এ আসাদ, আসাদ রে জলদি আয়”। আসাদ তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী। একমূহুর্তে চলে আসে সে। দুজনে চেঁচামেচি করে পুরো পাড়া মাথায় তুলে। নির্জন চা বাগানের নিরব কোয়ার্টারগুলো জেগে উঠে।
আর বসে থাকতে পারেনা নীলকান্ত। রাধিকাকে ডেকে পুরো ঘর সাফ করার হুকুম দিয়ে সেও যোগ দেয় আসাদদের দলে।
মোঃ কবির তালুকদার। হাইমচর, চাঁদপুর।